গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণ ও আর্থিক প্রণোদনা চাইবে পুলিশ

Passenger Voice    |    ১০:৫৭ এএম, ২০২৪-০২-২৭


গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণ ও আর্থিক প্রণোদনা চাইবে পুলিশ

দেশে অপরাধ ও অপরাধীদের ধরন বদলাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে বড় বড় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এসবের মোকাবেলায় নিজেদের সক্ষমতা আরো বাড়াতে চায় পুলিশ। এজন্য গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ঋণ ও আর্থিক প্রণোদনার দাবি উঠছে। আজ শুরু হতে যাওয়া এবারের পুলিশ সপ্তাহে বাহিনীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি তোলা হবে পদোন্নতি জট নিরসনের দাবিও।

‘স্মার্ট পুলিশ, স্মার্ট দেশ; শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ছয় দিনব্যাপী এবারের পুলিশ সপ্তাহ চলবে আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট ও পতাকাবাহী দলের দৃষ্টিনন্দন প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করবেন সরকারপ্রধান। বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামলূক ভাষণ দেবেন তিনি। এছাড়া পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টল পরিদর্শন করবেন। এবার প্যারেড কমান্ডার হিসেবে কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব দেবেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. সোহেল রানা। এছাড়া পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন কর্ম অধিবেশনে গত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নেয়া হবে।

পুলিশ সপ্তাহের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, প্রধান বিচারপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও আইজিপির সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মেলন। 

প্রতি বছরই পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে বৈঠক হয় পুলিশ বাহিনীর। এসব বৈঠকে বাহিনীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা দাবি উত্থাপন করা হয়। তার ধারাবাহিকতায় এবারো বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন, গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ঋণ, পরিদর্শক থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঝুঁকি ভাতা, নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের জন্য সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি জট কমানোসহ পুরনো দাবিগুলো ফের তুলে ধরা হবে। নতুন পদ সৃষ্টি ও পদোন্নতি জট নিরসনের কিছু উপায়ও তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে নিয়োগের পাশাপাশি বিদেশী মিশনগুলোয় প্রেষণে নিয়োগের মতো প্রস্তাব আসতে পারে। 

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের বেশকিছু দাবি আছে যা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। যেমন পুলিশ বিভাগ করা, মেডিকেল কলেজ, সাইবার ইউনিট গঠন, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ, পরিদর্শক থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঝুঁকি ভাতা দেয়া ও গাড়ির জন্য ঋণ সুবিধা দেয়া। প্রশাসনের উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব সবাই এ সুবিধা পাচ্ছেন। পুলিশেরও অনেক আগে থেকেই অন্যতম দাবি ছিল এটি। কিন্তু এখনো তা পূরণ হয়নি। এছাড়া আমাদের অনেকেই পদোন্নতি পাচ্ছেন। কিন্তু তাদের লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। এ বিষয়টিও তুলে ধরা হবে।’ 

উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তা ও সশস্ত্র বাহিনীর মেজর বা সমমনাসহ তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা গাড়ির জন্য বিনা সুদে ঋণ সুবিধা পান। তবে পুলিশ সুপারসহ তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সুবিধা পান না। ফলে তাদের জন্য গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দেয়ার দাবি উঠবে এবারের পুলিশ সপ্তাহে। এছাড়া উপকূলীয় থানা ও দ্বীপ এলাকায় কর্মরতদের জন্য দ্বীপাঞ্চল ভাতার দাবি তোলা হবে। পার্বত্য এলাকায় পুলিশ সদস্যরা দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন করায় প্রণোদনার অংশ হিসেবে মূল বেতনের ৩০ শতাংশ অনধিক ৩ হাজার টাকা হারে পাহাড়ি ভাতা পান। এ সীমা তুলে দেয়ার দাবি জানানো হবে। 

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০২৩ সালে অসীম সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজ, মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা প্রদর্শন, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের জন্য ৪০০ জন বিপিএম ও পিপিএম পদক পাচ্ছেন। ৩৫ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) দেয়া হবে। ৬০ জন পাচ্ছেন রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)। গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা প্রদর্শন, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ৯৫ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা) ও ২১০ জনকে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) দেয়া হবে। পদকপ্রাপ্তদের পদক দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

এদিকে পুলিশ সপ্তাহ ২০২৪ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শক পৃথক বাণী দিয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট পুলিশিং। অপরাধের ধরন বদলেছে। সেই সঙ্গে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির সর্বাত্মক চেষ্টা সরকারের রয়েছে। আগামী দিনে আমরা স্মার্ট পুলিশিংয়ের দিকে যাচ্ছি।’